রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সহনশীলতা, নম্রতা ও ধৈর্যশীলতা !

Comments · 45 Views

https://islamicauthors.com/article/2

কঠোরতা ও জোর-জবরদস্তি করে অধিকার আদায়, জালিম ও অত্যাচারীর চরিত্র। কিন্তু আমাদের নাবীﷺহকদারের ন্যায় সংগত হক আদায় ও তার সহায়তার নিমিত্তে ন্যায়ের মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন। যেন তারা তাদের হক বুঝে পায় ও তা গ্রহণ করে। আল্লাহﷻ তাআলা আমাদের নাবীﷺন্যায় ও সত্যের পথে আদেশ ও নিষেধের যে আদর্শ দান করেছেন, তা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা রাসুলুল্লাহﷺ-এরজীবনেকোন কঠোরতা, জবরদস্তি ও জুলুম-অত্যাচারের খুঁজে পাই না ।

আয়েশাرضي الله عنهاবলেন,

ما ضرب رسول الل ه - صلى الله ع ليه وسلم -شيئًا قط بيده، ولا امرأة ولا خادمًا إلا أن يجاهد في سبيل الله، وما نيل منه شيء قط فينتقم من صاحبه إلا أن ينتهك شيء من محارم الله تعالى فينتقم لله تعالىরাসূলﷺএক জিহাদের ময়দান ব্যতীত তার হাত দিয়ে কাউকে মারেননি, এমনকি তার স্ত্রী ও খাদেমকেও না। তাঁকে কোন ব্যাপারে প্রতিশোধ নিতে দেখিনি, তবে কেউ আল্লাহর বিধানের অবমাননা করলে তিনি আল্লাহর হকের জন্যই প্রতিশোধ নিতেন।[১]


আনাসرضي الله عنهবলেন,

كنت أمشي مع رسول الله - صلى الله عليه وسلموعليه برد نجراني غليظ الحاشية، فأدركه أعرابي، فجبذه بردائه جبذة شديدة، فنظرت إلى صفحة عاتق النبي - صلى الله عليه وسلم - وقد أثرت بها حاشية الرداء من شدة جبذته، ثم قال: يا محمد، مر لي من مال الله الذي عندك فالتفت إليه، فضحك ثم أمر له بعطاءআমি রাসূলুল্লাহﷺ-এর সাথে চলছিলাম, তাঁর গায়ে ছিল মোটা ঝালর যুক্ত নাজরানী চাদর। অত:পর এক বেদুইন তাকে ধরে সজোরে টানতে লাগল, আমি তাকিয়ে দেখি তার ঘাড়ে জোরে টানের চোটে চাদরের ঝালরের দাগ লেগে গেছে। তারপর বেদুইন বলে উঠল: হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে যে সম্পদ আছে, তা আমাকে দেয়ার আদেশ দাও। তিনি তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন ও তাকে দেয়ার আদেশ দিলেন।[২]

অপর একটি হাদিসে পাওয়া যায়,

রাসূলﷺহুনাইনের যুদ্ধ শেষে ফিরছিলেন, এমতাবস্তায় কতিপয় বেদুইন তাঁর অনুসরণ করে তাঁর নিকট চাইতে থাকল। অত:পর তারা তাঁকে এক বৃক্ষের দিকে নিয়ে আসল, তারপর তিনি স্বীয় সওয়ারীর উপর থাকা অবস্থায় তাঁর চাদর নিয়ে নেয়া হল। তিনি বলেন:ردوا علي ردائي، أتخشون علي البخل؟ فقال: فوالله لو كان لي عدد هذه العضاة نعمًا لقسمته بينكم، ثم لا تجدوني بخيلاً ولا جبانًا ولا كذابًا
আমাকে আমার চাদর ফিরিয়ে দাও, আমার উপর কি কৃপণতার ভয় কর? তিনি আবার বল্লেন: আল্লাহ শপথ! আমার নিকট যদি এ বৃক্ষসমূহ পরিমাণও পশু থাকত তবুও আমি তা তোমাদের মাঝে বিতরণ করে দিতাম। তারপর তোমরা আমাকে না কৃপণ পেতে, না কাপুরুষ, না মিথ্যাবাদী পেতে।[৩]

কতই না সুন্দর তাঁর আচরণ এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের চিত্র। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নমনিয়তা এবং উপকারী ও কল্যাণজনক বিষয়কে বুঝান ও অন্যায় অকল্যাণকে প্রতিকার করাই ছিল তাঁর কর্ম।

যেমন একবার সাহাবারাرضي الله عنهمযখন দেখল যে, মসজিদে পেশাবকারী ভুল পথে পা বাড়িয়েছে, তারা রাগান্বিত হয়ে অতি তাড়াতাড়ি তাকে বারণ করার চেষ্টা করতে গেল, তাদের এ কাজ করার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু দয়াদ্র রাসূলুল্লাহﷺতাদেরকে বাধা দিলেন, কেননা বেদুইন ছিল অজ্ঞ ব্যক্তি, আর তা করলে তার ক্ষতি হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। আর রাসূল্লাহﷺযা করেছেন তা ছিল অনুপম, উত্তম।

আবু হুরাইরাرضي الله عنهবলেন,

بال أعرابي في المسجد فقام الناس إليه ليقعوا فيه فقال النبي - صلى الله عليه وسلم -: دعوه وأريقوا على بوله سجلاً من ماء، أو ذنوبًا من ماء، فإنما بعثتم ميسرين، ولم تبعثوا معسرين
এক বেদুইন মসজিদের ভিতর পেশাব করা আরম্ভ করলে, সাহাবীরাرضي الله عنهمতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। অত:পর নাবীﷺবললেন: তোমরা তাকে বারণ করো না, ছেড়ে দাও এবং পেশাবের জায়গায় এক বালতি পানি ঢেলে দাও। নিশ্চয়ই তোমরা সহজতা আরোপকারী হিসাবেই প্রেরিত হয়েছ, কঠোর হয়ে প্রেরিত হওনি।[৪]

দাওয়াতী কাজে রাসূলুল্লাহﷺযে ধৈর্য, তাঁর অনুসারী দাবীদারদের জন্য অপরিহার্য হলো সে অনুযায়ী তার আদর্শ মত চলা এবং নিজিকে অধৈর্যের মুখে ঠেলে না দেয়া।

আয়েশা رضي الله عنها বলেন,

هل أتىعليك يوم كان أشد من أحد؟ قال: لقد لقيت من قومك، وكان أشد ما لقيت منهم يوم العقبة، إذ عرضت نفسي على ابن عبد ياليل بن عبد كلال، فلم يجبني إلى ما أردت، فانطلقت وأنا مهموم على وجهي، فلم أستفق إلا وأنا بقرن الثعالب، فرفعت رأسي، فإذا أنا بسحابة قد أظلتني فنظرت فإذا فيها جبريل عليه السلام فناداني فقال: إن الله تعالى قد سمع قول قومك لك، وما ردوا عليك وقد بعثت إليك ملك الجبال لتأمره بما شئت فيهم فناداني ملك الجبال فسلم علي ثم قال: يا محمد إن الله قد سمع قول قومك لك، وأنا ملك الجبال، وقد بعثني ربك إليك لتأمرني بأمرك، فما شئت؟ إن شئت أطبقت عليهم الأخشبين. فقال النبي - صلى الله عليه وسلم -: بل أرجو أن يخرج الله من أصلابهم من يعبد الله وحده لا يشرك شيئًا
আমি রাসূলুল্লাহﷺকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার উপর ওহুদ যুদ্ধের দিনের চেয়ে কঠিন কোন সময় কি অতিবাহিত হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেন: আমি তোমার সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যা পেয়েছি। আর তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠিন ছিল, যা আমি তাদের পক্ষ থেকে আকাবার দিনে পেয়েছি। আমি যখন ইসলামের দাওয়াত দেওয়া জন্য নিজকে ইবনে আবদ য়ালীল বিন আবদে কিলালকে উপস্থাপন করেছিলাম, আমি যা চেয়েছিলাম সে ব্যাপারে তারা আমার ডাকে সাড়া দেয়নি। আমি সেখান থেকে বিষন্ন হৃদয়ে ফিরে এসেছিলাম। আমি কারনুস সায়ালেব [ছায়লুল কাবীর] এ আসার পর আমার পূর্ণ জ্ঞান ফিরেছিল। অত:পর আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, এক খণ্ড মেঘমালা আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি যে, সেখান থেকে জীব্রাঈলعليه السلامআমাকে ডেকে বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আপনার সম্প্রদায়ের কথা শুনেছেন ও তারা আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন তাও অবগত হয়েছেন। অত:পর তিনি পাহাড়ের দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেস্তাকে প্রেরণ করেছেন, আপনি তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য তাঁকে যা ইচ্ছা নির্দেশ দিতে পারেন। এরপর পাহাড়ের দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেস্তা আমাকে সালাম দিয়ে বললেন: হে মুহাম্মাদ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আপনার সম্প্রদায় আপনার সাথে কিভাবে কথা বলেছে তা শুনেছেন। আর আমি পাহাড়ে নিযুক্ত ফেরেস্তা, আমাকে আমার প্রতিপালক আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন, আপনি যেন আমাকে যা ইচ্ছা নির্দেশ দেন। আপনি যদি চান, তবে মক্কা বেষ্টিত দুই বড় পাহাড়কে তাদের উপর সমন্বয় করে দেই। অত:পর নাবীﷺবলেন: আমি চাই, আল্লাহ তাআলা তাদের ঔরসে এমন সন্তান জন্ম দিবেন, যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ইবাদাত করবে ও তার সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করবে না।[৫]

বর্তমানে অনেকেই দাওয়াতী কাজে তাড়াহুড়া করে থাকে এবং অতি দ্রুত এ কাজের ফলাফল পেতে চায়। প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেয়া দাওয়াতী ক্ষেত্রে ও ইখলাসে একটি বড় দোষ। উক্ত দোষ দায়ীদের মাঝে বিস্তার হওয়ার কারণে অনেক দাওয়াতী কাজ নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কোথায় সে ধৈর্য ও কোথায় সে সহনশীলতা। অনেক বছর পর, অনেক কষ্ট সহ্য, অনেক ধৈর্য ধারণ এবং অনেক যুদ্ধ-জিহাদের পরই তো রাসূলুল্লাহﷺযা চেয়েছিলেন তা প্রতিফলিত হয়েছিলো !!

ইবনে মাসউদرضي الله عنهবলেন,

আমি যেন রাসূলুল্লাহﷺকে কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি তিনি বলেন,كأني أنظر إلى رسول الله - صلى الله عليه وسلميحكي نبيًا من الأنبياء صلوات الله وسلامه عليه، ضربه قومه فأدموه وهو يمسح الدم عن وجهه ويقول اللهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون
সে নবীরعليه السلامসম্প্রদায় তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, তিনি মুখমন্ডল থেকে রক্ত মুছা অবস্থায় বলছে: হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা বুঝে না।[৬]

অপর একটি হাদিসে পাওয়া যায়,

একদা রাসূলুল্লাহﷺতাঁর সাহাবীদের সাথে কোন জানাজা নামাযে উপস্থিত ছিলেন, এমতাবস্থায় যায়েদ বিন সুনাহ নামক জনৈক ইয়াহুদী তার প্রাপ্ত ঋণ চাওয়ার জন্য এসে রাসূলুল্লাহﷺ-এর জামার কলার ও চাদর ধরে রাঙ্গা চোখে বলল: ওহে মুহাম্মাদ! তুমি আমার প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধ করবে না? এবং সে অনেক শক্ত শক্ত কথা বলল। এ দৃশ্য দেখেرضي الله عنهরেগে গেলেন ও যায়েদের দিকে তাকালেন এমতাবস্থায় তাঁর উভয় চুক্ষু যেন ঘুর্ণিয়মান তারকার মত স্বীয় কক্ষপথে ঘুরার মত ঘুরছে। অত:পর বললেন: ওহে আল্লাহর দুশমন! তুমি রাসূলুল্লাহﷺ-এর সাথে এমন কথা বললে আমি যা শুনছি, আর এমন ব্যবহার করলে যা আমি দেখছি? যিনি তাঁকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাঁর শপথ করে বলছি, আমি যদি তাঁর তিরস্কারের ভয় না করতাম তবে আমার তলোয়ার দ্বারা এখনই তোমার মাথাকে আলাদা করে দিতাম। আর রাসূলুল্লাহﷺশান্ত ভাবে উমারرضي الله عنهএর দিকে তাকাচ্ছিলেন, অত:পর বললেন:
يا عمر، أنا وهو كنا أحوج إلى غير هذا، أن تأمرني بحسن الأداء، وتأمره بحسن التباعة، اذهب به يا عمر فأعطه حقه، وزده عشرين صاعًا من تمر
ওহে উমার! শুন, আমি ও সে ব্যক্তি তোমার নিকট থেকে এরকম আচরণ আশা করিনি। তোমার নিকট হতে এ আশা করি যে, তুমি আমাকে ঋণ পরিশোধ করার অনুরোধ করবে ও তাকে সুন্দর আচরণ করতে বলবে।উমার তুমি তাকে নিয়ে গিয়ে তার অধিকার দিয়ে দাও ও অতিরিক্ত বিশ সা খেজুর দিয়ে দাও।যায়েদ [ইয়াহুদী] বলে, উমার যখন আমাকে বিশ সা খেজুর বেশী দিল, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে উমার! বেশী দিলে কেন? উমার বললেন: রাসূলুল্লাহﷺতোমার রাগের পরিবর্তে তিনি বেশী দিতে বলেছেন। যায়েদ বলে: হে উমার! তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছো? উমার বলেন: না, তবে তুমি কে? সে বলল: আমি যায়েদ বিন সুনাহ।তিনি বলেন: ও! তুমি ইয়াহুদী পাদ্রী? আমি বললাম: হ্যাঁ ,। তিনি বলেন: তুমি রাসূলুল্লাহﷺ-এর সাথে এরূপ আচরণ করলে কেন? এরূপ কথা বললে কেন? সে বলল: হে উমার! আমি যখন তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলাম,তখন তার চেহারার মাঝে নাবূয়্যতের দুটি আলামত ব্যতীত সব বুঝতে পেরে ছিলাম, আর আমি তার নিকট থেকে এ দুটি আলামত সম্পর্কে অবহিত হইনি: আর তা হল: ১. তাঁর সহিষ্ণুতা অজ্ঞতার উপর অগ্রগামী কি না। ২. মুর্খতা বশত তাঁর সাথে কেউ যত বেশী অসদাচরণ করবে তার ধৈর্য আরো বৃদ্ধি পাবে।এ দুটি বিষয় পরীক্ষার জন্যই আমি এ আচরণ করেছি। ওহে উমার! তোমাকে সাক্ষী করে বলছি: আল্লাহ তাআলা আমার রাব্ব হওয়াতে, ইসলাম আমার দ্বীন হওয়াতে ও মুহাম্মাদﷺআমার নবী হওয়াতে আমি সন্তুষ্ট। আমি তোমাকে এও সাক্ষী রাখছি যে, আমার অর্ধেক সম্পদ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য সাদকা করে দিলাম। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আপনি তাদের কতিপয়ের জন্য নির্ধারণ করুন, কেননা আপনি তাদের সবাইকে দিতে পারবেন না। যায়েদ বলল: তাদের কতিপয়ের জন্যই। এরপর যায়েদ [ইয়াহুদী] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে হাজীর হয়ে বলল:أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً عبده ورسولهঅর্থাৎ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।সে তাঁর উপর ঈমান আনলো ও তাঁকে নবী রূপে বিশ্বাস স্থাপন করলো।[৭]

আমরা ঘটনাটিও দীর্ঘ কথোপকথনটি আদ্যপ্রান্ত চিন্তা করি, যাতে আমরা পেতে পারি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ, অনুসরণের একটি বড় শিক্ষণীয় অংশ। মানুষকে দয়া ও নমনিয়তার মাধ্যমে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে পাব ধৈর্যের শিক্ষা। আর যদি তারা সদ্ব্যবহার করে তবে তাতে তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে ও তাদের হৃদয়ে শুভ আশাবাদ উজ্জীবিত হবে।

আয়েশা رضي الله عنها বলেন,

اعتمرت مع النبي - صلى الله عليه وسلم - من المدينة حتى إذا قدمت مكة، قلت: بأبي أنت وأمي يا رسول الله قصرت وأتممت، وأفطرت وصمت، قال أحسنت يا عائشة وما عاب علي
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদীনা হতে উমরা করি, আমি মক্কায় যাওয়ার পর বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, সালাত কসরও করেছি, পরিপূর্ণও আদায় করেছি। রোযা বাদও দিয়েছি আবার রোযা রেখেছি। তিনি শুনে বলেন: হে আয়েশা ভালই করেছো। তিনি তাতে আমাকে কোন দোষারোপ করেননি।[৮]

আল্লাহﷻ তাঁর পবিত্র কালাম আল -কুরআনে রাসূলুল্লাহﷺএর চরিত্র সম্পর্কেবলেন,

◽আল-ক্বালাম ৬৮:১-৪
نٓۚ وَٱلْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ۝ مَآ أَنتَ بِنِعْمَةِ رَبِّكَ بِمَجْنُونٍ۝ وَإِنَّ لَكَ لَأَجْرًا غَيْرَ مَمْنُونٍ۝ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
নুন, শপথ কলমের এবং ওরা যা লিপিবদ্ধ করে তার।◈ তোমার রাব্বের অনুগ্রহে তুমি উম্মাদ নও।◈ তোমার জন্য অবশ্যই রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার,◈ তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী,◈

আল্লাহﷻ আরো বলেন,

◽আল-আম্বিয়া ২১:১০৭-১০৮
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَٰلَمِينَ۝ قُلْ إِنَّمَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
আমরাতো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রাহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি।◈ বলো, আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ(উপাস্য) এক ইলাহ, সুতরাং তোমরা তারপরেও কি আত্মসমর্পণকারী হবে না ?◈

আল্লাহﷻ আরো বলেন,

◽আল-সাবা ৩৪:২৮
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
আর আমরাতো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা।◈

আল্লাহﷻ আরো বলেন,

◽আল-ইমরান ৩:১৫৯
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمْۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلْقَلْبِ لَٱنفَضُّوا۟ مِنْ حَوْلِكَۖ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى ٱلْأَمْرِۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَوَكِّلِينَ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত; এবং তুমি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতে তাহলে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংসর্গ হতে অন্তর্হিত হত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অতঃপর তুমি যখন সংকল্প কর তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীগণকে ভালবাসেন।◈

এ আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নাবীﷺ-এর প্রশংসা করেছেন এজন্য যে, ওহুদের যুদ্ধে কতিপয় লোকের ত্রম্নটির কারণে প্রিয় নাবীﷺযুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি এবং তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রতি কোনো প্রকার অশোভ-আচরণ করেননি এবং তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্টও হননি। বরং তিনি তাঁর নিজের শরীরের ক্ষত-বিক্ষতের কথাও আল্লাহর রহমতে ভুলে গিয়েছিলেন এবং যারা ওহুদের যুদ্ধে ভুল করেছিলেন, তিনি তাদের ক্ষমাও করেছিলেন। এমনই ছিলো মহান আল্লাহর রহমতে মহানবীর গুণাবলী।

যেমন প্রিয় নাবীﷺ-এর প্রশংসায় মহান আল্লাহﷻ বলেন,

◽আহযাব ৩৩:৪৫-৪৭
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ إِنَّآ أَرْسَلْنَٰكَ شَٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا۝ وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا۝ وَبَشِّرِ ٱلْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُم مِّنَ ٱللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
হে নাবী! অবশ্যই আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী হিসাবে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে ◈ আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে।◈ আর তুমি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা অনুগ্রহ।◈

মহান আল্লাহﷻ আরো বলেন,

◽আল আরাফ ৭:১৫৮
قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
বলো, হে মানবসপ্রদায়! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্র রাসূল ,যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই; তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। কাজেই তোমারা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূল নিরক্ষর নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখে । আর তোমারা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমারা হিদায়াতপ্রাপ্ত (সঠিক পথ প্রাপ্ত) হও।◈

এভাবে রাসুলুল্লাহﷺকে ভালোবাসার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহﷻ বলেন,

◽আল ইমরান ৩:৩১-৩২
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِى يُحْبِبْكُمُ ٱللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ۝ قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
বলো, তোমরা যদি আল্লহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর , আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ◈ বলো, তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফেরদেরকে পছন্দ করেন না ।◈

মহানবীﷺ-এর মধ্যেই মানব জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ ও গুণাবলী বিদ্যমান। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহﷻ বলেন,

◽আল বাকারাহ ২:১৫১-১৫২
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ۝ فَٱذْكُرُونِىٓ أَذْكُرْكُمْ وَٱشْكُرُوا۟ لِى وَلَا تَكْفُرُونِ۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
যেমন আমরা তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি , যে তোমাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। আর তা শিক্ষা দেন যা তোমরা জানতে না।◈ কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো , আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ে না।◈

একই ভাবে মহান আল্লাহﷻ বলেন,

◽আহ্যাব ৩৩:২১
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلْيَوْمَ ٱلْءَاخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرًا۝
(সম্ভাব্য ভাবানুবাদ)
অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলের অনুসরণের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।◈

এভাবে মহনবীﷺ-এর গুণাবলীর বর্ণনা একমাত্র আল্লাহﷻর দ্বারাই শেষ হতে পারে, মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।

আল্লাহﷻ আমাদেরকে রাসূলুল্লাহﷺএর মাহান চরিত্র অনুধাবন ও অনুকরণের মাধ্যমে প্রকৃত নম্র, বিনয়ি সহণশীল ও ন্যায়পরায়ণ মুসলিম হয়ে ওঠার তাওফিক দান করুন ।

(امين و الحمد لله رب العالمين)

? তথ্যসূত্র:

[১]মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫৭১৫

[২]মুসলিম, হাদিস: ২৩২৮

[৩]হাদীসটি বাগবী তার শারহুস সুন্নায় বর্ণনা করেন, এবং আলবানী তা সহীহ বলেন

[৪]বুখারী, হাদিস: ৬১২৮

[৫]বুখারী, হাদিস:৩২৩১; মুসলিম, হাদিস: ১৭৯৫

[৬]বুখারী, হাদিস: ৬৯২৯; মুসলিম, হাদিস: ১৭৯২

[৭]মুসতাদরাকে হাকীম গ্রন্থে সহীহ সূত্রে বর্ণীত

[৮]নাসায়ী, হাদিস: ১৪৫৬

Comments